ভালুকা থেকে কোটি টাকার কুমির রপ্তানি হচ্ছে জার্মানিতে

বাংলাদেশ থেকে জার্মানিতে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এই প্রথম এক কোটি টাকার কুমির রপ্তানি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপে ৭০ থেকে ১০০টির মতো কুমির রপ্তানি করা হবে। এ রপ্তানির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রথম কুমির রপ্তানিকারক দেশের তালিকায় নাম লেখাচ্ছে। সরকার গত ১০ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মাঝে একমাত্র বাণিজ্যিকভাবে কুমির চাষ করছে ময়মনসিংহ জেলার ভালুকার রেপটাইলস ফার্ম লি. । ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার হাতিবেড় গ্রামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড ২০০৪ সালে এ খামারটি প্রতিষ্ঠা করে। শুরুতেই কুমিরের সংখ্যা ছিল ৭৫টি। পরে এসব কুমিরের ডিম থেকে কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চা ফোটানো হয়। বর্তমানে এ খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে কুমির আছে ৮শ'টির বেশি। আগামী বছর আরও একশ'টি কুমির আমদানি করবে খামার কর্তৃপক্ষ। এ খামারে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিনিয়োগ রয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়া মহাদেশের মাঝে একমাত্র বাণিজ্যিকভাবে কুমির চাষ বাংলাদেশেই শুরু হয়। আগামী ৫ বছরের মধ্যে বিশ্বে কুমিরের সবচেয়ে বড় খামার হবে এটি বলে উদ্যোক্তারা আশা করছেন। বর্তমানে বিশ্বের বৃহৎ কুমিরের খামার রয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। কতর্ৃপৰ আশা করছে, ২০১৪ সাল নাগাদ প্রতি বছর চার হাজার কুমির রপ্তানি করে তিন থেকে চার মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে। ইতিমধ্যেই ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশ থেকে কুমির আমদানির প্রসত্দাব দিয়েছে। বিশ্বে পাঁচ থেকে ছয় শ' মিলিয়ন ডলারের কুমিরের মাংসের বাজার রয়েছে। এ খামারে মূলত লোনা পানির কুমিরের চাষ করা হয়। বিশ্বে লোনা পানি কুমিরের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে থাইল্যান্ড বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লোনা পানির কুমিরের চামড়া, মাংস ও হাড়ের যোগান দিচ্ছে। বিশ্বে সাত প্রজাতির কুমিরের চাষ করা হয়। এর মধ্যে লোনা পানির কুমিরই হচ্ছে সেরা। বাংলাদেশ পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ২০০৪ সালের ৫ মে এ খামার প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়। উদ্যোক্তারা পরে আনত্দর্জাতিক সংস্থা 'সিআইটিইএস'-এর অনুমোদন নিয়ে মালয়েশিয়ার সারওয়াত থেকে সোয়া কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৫টি কুমির আমদানি করে। ২০০৪ সালের ২২ ডিসেম্বর কুমিরগুলো খামারে ছাড়া হয়। তখন আমদানি করা কুমিরগুলোর বয়স ছিল গড়ে ১০ থেকে ১৪ বছর। কুমিরগুলো ৭ ফুট থেকে সর্বোচ্চ ১২ ফুট লম্বা ছিল। বিশেষজ্ঞরা জানান, কুমিরের গড় আয়ু ১০০ বছর পর্যনত্দ হয়ে থাকে। আমদানি করা কুমিরের মধ্যে ১৫টি ছিল পুরম্নষ। খামারের কুমিরকে খাবার হিসেবে মাছ ও মাংস দেয়া হয়। রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেডেরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুশতাক আহম্মেদ জানান, গত জুলাই মাসে জার্মানির সঙ্গে কুমির রপ্তানির চুক্তি হয়। তারপর ৩১ আগস্ট প্রধান বন সংরৰকের কাছে কুমির রপ্তানির অনুমতি চাওয়া হয়। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্তহীনতায় তা বিলম্বিত হয়। এতে করে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ভবিষ্যতে তিনি এ ধরনের ক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার দাবি জানান। তিনি জানান, আগামী মাসে ইউরোপের কয়েকটি দেশে আরো দেড় থেকে দু'শ' কুমির রপ্তানির প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। রেপটাইলস ফার্ম সূত্রে জানা গেছে, ভালুকা হাতিবেড় গ্রামে প্রায় ১৩ একর জমির মধ্যে ৪ একর জমির মাটি কেটে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ৩২টি পুকুর তৈরি করা হয়েছে। পুকুরগুলোর তলদেশ পাকা এবং ৩ ফুট ইটের উপর ৩ ফুট কাটা তারের বেষ্টনী রয়েছে। কুমির যাতে স্বাভাবিকভাবে নিখাদ প্রাকৃতিক পরিবেশে থেকে জীবনযাপন করতে পারে সেজন্য খামারে ৪০ প্রজাতির প্রায় ৬ হাজার ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ রোপণ করা হয়েছে। লাগানো হয়েছে ছোট প্রজাতির কৃত্রিম ঘাস। এর মধ্য দিয়ে খামারটি গড়ে তোলা হয়েছে। গত বছর বিশ্ববাজারের প্রায় ৪০ হাজার কুমিরের চামড়া কেনাবেচা হয়েছে। চীন, তাইওয়ান, জাপান, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কুমিরের মাংসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, পাপুয়া নিউগিনি, ইন্দোনেশিয়া, চীনসহ প্রায় অর্ধশত দেশে বাণিজ্যিকভাবে কুমিরের চাষ হচ্ছে।

তথ্যসূত্রঃ সাপ্তাহিক দিনবদল ২১-০১-২০১০

Hiç yorum yok:

Yorum Gönder